মুখোশ শিল্প
বাংলার সামাজিক ইতিহাসের একটি মূল্যবান সম্পদ মুখোশচিত্র। মুখোশচিত্র গ্রামবাংলার সাধারণ মানুষের সৃষ্টি। এটি লোক কারুশিল্পের ঐতিহ্যের এক অনন্য শৈল্পিক অংশ। মুখোশের মাধ্যমে মায়াশক্তি রচনা করে অদৃশ্য শক্তিকে সন্তুষ্ট করার কৌশল যেমন রয়েছে, তেমনই মুখোশের আড়ালে আত্মরক্ষা ও শিকারে সাফল্য আনার দিকটিও সমান গুরুত্বপুর্ণ। বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে মালাকার, পাল, কুমার, আচার্য এবং অন্যান্য ঐতিহ্যবাহী শিল্পী মুখোশ তৈরি করে থাকেন। মুখোশ কাঠ, কাগজ, মাটি, বেত, শোলা ইত্যাদি উপকরণ দিয়ে তৈরি করা হয়ে থাকে। মুখোশ তৈরিতে লাল, নীল, হলুদ এবং কালো রং প্রধান। মুখোশ তৈরি করতে গ্রামবাংলার দেবদেবীর মুখাকৃতি এবং বিভিন্ন ধরনের পশুপ্রাণীর মুখের মতো তৈরি করে যা ডাইস বা ছাপ হিসেবে পরিচিত তার ওপর মুখোশের কাঠ ও বেত পোঠা তৈরি করে নিতে হয়। পরে এগুলো শিল্পীরা হাতে টিপে টিপে দেবদেবীর কিংবা পশু আকৃতির মুখোশ তৈরি করেন।
অরণ্য-ঘেরা পরিবেশ কিংবা গ্রামীণ লৌকিক জীবনের অদৃশ্য ভাবনা ও পশু-পাখির রূপ নিয়ে মুখোশগুলি তৈরি। এই মুখোশগুলিকে সঙ্গী করে একদিন যা ছিল বিরামহীন যুদ্ধের প্রস্তুতি, পরবর্তীকালে তা নান্দনিক চেহারা নিয়ে হয়েছে বিনোদন মাধ্যম। মুখোশের সাহায্য নিয়ে অদ্ভুত কৌতুকরস সৃষ্টির চেষ্টা হয়েছে। ধর্মীয় চরিত্র যেমন আছে, তেমনই ধর্মীয় আচারের সঙ্গেও মুখোশের যোগ ক্রমে দৃঢ় হয়েছে।