শোলাশিল্প

 

শোলাশিল্প  বাংলার অন্যতম লোকজ শিল্প। শোলাশিল্পীরা নিজের কর্ম আর সৃজনশীলতা দিয়ে ফুটিয়ে তুলেছেন লোকায়ত জীবনের নির্মোহ রূপ। শোলা, ছুড়ি, চাকু আর আঠার সাহায্যে তৈরি করছেন মনোমুগ্ধকর শিল্পকর্মের। এক সময়ের জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা শোলাকে মেধা, দক্ষতা আর পরিশ্রম দিয়ে শিল্পে পরিণত করছেন শিল্পীরা।

শোলা এক জাতীয় গুল্ম জাতীয় উদ্ভিদ থেকে এগুলি তৈরি হয়। বাংলাদেশের প্রাকৃতিক ও সামাজিক পরিবেশে শোলাগাছের গুরুত্ব অনেক। শোলাগাছ জলাশয়ে জন্মে। শোলা একটি কান্ডসর্বস্ব গাছ। কান্ডের বাইরের আবরণটা মেটে রঙের, কিন্তু ভেতরটা সাদা। শোলাগাছ সাধারণত ৫-৬ ফুট লম্বা হয় এবং কান্ডের ব্যাস হয় দুই থেকে তিন ইঞ্চি। বাংলাদেশের ঢাকা, মানিকগঞ্জ, কেরানীগঞ্জ, মুন্সিগঞ্জ, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, মৌলভীবাজার, মাগুরা, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, হবিগঞ্জ, জামালপুর, শেরপুর, যশোর, রংপুর, দিনাজপুর ও বরিশাল অঞ্চল শোলাশিল্পের জন্য প্রসিদ্ধ। 

শোলার শিল্পকর্ম সৃষ্টিতে তেমন কোনো যন্ত্রপাতির প্রয়োজন হয় না। একটি ধারাল ছুরি ও এক খন্ড পাথর বা কাঠই যথেষ্ট। প্রথমে ধারাল ছুরির সাহায্যে শোলাকে প্রয়োজনমতো টুকরা করা হয়। পরে ছুরি দিয়ে পাতলা করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে একটি লম্বা পাতের মতো করা হয়। এই পাতকে জড়িয়ে জড়িয়ে পুনরায় কান্ডের মতো করে দড়ি দিয়ে বেঁধে এবং ছুরির সাহায্যে নানা আকারের পাপড়ি কেটে বেলি, কদম ইত্যাদি ফুল তৈরি করা হয়। টোপর, পশুপাখি, অলঙ্কার, চালচিত্র, পটচিত্র প্রভৃতি তৈরিতে পাতলা করে কাটা শোলাকে আঠার সাহায্যে সংযুক্ত করা হয়। পরে প্রয়োজন অনুসারে তাকে বিভিন্ন আকার দেওয়া হয়। শোলাকে সংযুক্ত করতে সাধারণত নিজেরাই তেঁতুলবিচির আঠা তৈরি করে নেয়। বর্তমানে অবশ্য বাজারের আঠাও ব্যবহার করা হয়।

বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে শোলার শিল্পকর্ম তৈরি হয়। এ পেশায় নিয়োজিত কারুশিল্পীরা মালাকার বা শোলারী নামে পরিচিত।