শতরঞ্জি

শতরঞ্জি বা ডুরি মূলত এক প্রকার কার্পেট, একসময় সমাজের অভিজাত শ্রেণির গৃহে, বাংলো বাড়িতে বা খাজাঞ্চিখানায় বিশেষ আসন হিসেবে শতরঞ্জি ব্যবহৃত হয়। শতরঞ্জি ফার্সি ভাষার শব্দ শতরঞ্জ থেকে এসেছে। দাবা খেলার ছককে শতরঞ্জ বলা হয় এবং দাবা খেলার ছকের সঙ্গে শতরঞ্জির নকশার মিল থাকার কারণে এটাকে শতরঞ্জি নামকরণ করা হয়। এক সময় বিত্তবানদের আভিজাত্যেরপ্রতীক ছিল শতরঞ্জি যা সাধারণ আসন, শয্যা, বিছানা, সভা বা মজলিশে বসার জন্য ব্যবহৃত হতো। তাছাড়া দেয়ালমাদুর হিসেবেও অত্যন্ত আকর্ষণীয় ছিল শতরঞ্জি। ইদানিং ব্যাগ, ছোট কয়েন পার্স, টেবিল ম্যাটসহ অন্যান্য ইত্যাদি সৃজনশীল পণ্যের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।

বর্তমান বিশ্বে বুনন শিল্পের মধ্যে ‘‘শতরঞ্জি বুনন’’ সবচেয়ে প্রাচীনতম। শতরঞ্জি তৈরির প্রধান উপকরণ সুতলি।  এ পণ্য উৎপাদনে কোন প্রকার যান্ত্রিক ব্যবহার নেই। কেবলমাত্র বাঁশ এবং রশি দিয়ে মাটির উপর সুতো দিয়ে টানা প্রস্ত্তত করে প্রতিটি সুতা গননা করে হাত দিয়ে নকশা করে শতরঞ্জি তৈরি করা হয়। কোন জোড়া ছাড়া যে কোন মাপের শতরঞ্জি তৈরি করা যায়। শিল্পীর নিপূণতায় শতরঞ্জির নকশা হিসেবে এসেছে নারীর মুখ, পশুপাখি, রাখাল বালক, কলসি নিয়ে রমণী, নৌকা, রাজা-রাণী, দেবদেবী, পৌরানিক চরিত্র, প্রাকৃতিক দৃশ্য।

একসময় রাজা-বাদশাহদের কাছেও শতরঞ্জির কদর ছিল। মুঘল সম্রাট আকবরের দরবারে শতরঞ্জি ব্যবহার করা হতো। জমিদারদের ভোজনের আসনেও ছিল শতরঞ্জির ব্যবহার। এই শতরঞ্জি নদীপথে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে যেত। রংপুরের শতরঞ্জি রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, উত্তর আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশে।