নকশি শিকা

 

লোক ও কারুশিল্পের অন্যতম অনুষঙ্গ শিকাশিল্প। পাট শিকা তৈরির প্রধান উপকরণ। তবে নকশি শিকা তৈরিতে কঞ্চি সুতলি, ঝিনুক, কড়ি, শঙ্খ, কাপড়, পোড়ামাটির বল ইত্যাদিও ব্যবহৃত হয়। দেশের পল্লী অঞ্চলে অনেক বাড়িতেই শিকার ব্যবহার আছে। ঘরের আড়া বা সিলিং-এ শিকা বেঁধে তাতে খাদ্যদ্রব্যসহ সংসারের নানা জিনিস ঝুলিয়ে রাখা হয়। নারীরা এ শিল্পের রূপকার।

আমাদের দেশে বিভিন্ন সাইজের শিকা তৈরি হয়। শিকার অলঙ্করণ-প্রক্রিয়া একটি অভিনব ব্যাপার। শিকার ব্যবহার বিলুপ্ত হয়ে যায়নি। নকশি শিকার অসংখ্য আঞ্চলিক নাম রয়েছে, যেমন- উল্টাবেড়ী, ফুলটুংগী, রসুন দানা, আংটিবেড়, ফুলমালা, ডালিম বেড়, ফুলচাং, গানজা ইত্যাদি। এতে বিভিন্ন রকম গ্রন্থি ব্যবহার করা হয়, যেমন মাউরা গিরা, রসুন গিরা, পাগড়ি গিরা, দামান গিরা, টাহা (টাকা) গিরা, বড়শি গিরা, ঝুঁটি গিরা, সুপারি গিরা ইত্যাদি। এর সঙ্গে যেসব অলঙ্করণ যুক্ত হয় সেগুলি হচ্ছে সিকি, টাকা, হাতির কান, ডালিম ইত্যাদি।

শিকা গৃহস্থালি কাজের জন্য নির্মিত হলেও তার মধ্যে শিল্পীর কারুচাতুর্য এবং সৌন্দর্যচেতনারও প্রকাশ ঘটে। পুঁতি, কড়ি, মাটির গোলাকার ঢেলা ইত্যাদির সাহায্যে শিকায় নকশি করা হয়। কোনো কোনো শিকায় অষ্টদলপদ্ম ও কদমফুলের অলঙ্করণও দেখা যায়। বিদেশিদের কাছেও বাংলাদেশের শিকাশিল্প আকর্ষণীয়।

শিকা তৈরির পাশাপাশি আজকাল পাটের তৈরি টেবিল ম্যাট, মানি ব্যাগ, ফ্লোর ব্যাগ, নেট, প্লেটম্যাট, লেডিস ব্যাগ, দেয়াল সজ্জা ও গৃহসজ্জারও রকমারি সামগ্রী তৈরি হচ্ছে। এসব সামগ্রীও দেশ-বিদেশে সমানভাবে সমাদৃত হচ্ছে। অতীতে নকশি শিকা ঘরোয়াভাবেই তৈরি করা হতো। বর্তমানে কারুশিল্পের মর্যাদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বাণিজ্যিকভাবে তৈরি হচ্ছে এবং বিদেশেও এর ভাল বাজার রয়েছে।