তামা-কাঁসা-পিতল শিল্প
দেশের লোকসংস্কৃতি ও লোকঐতিহ্যের সাথে মিশে আছে কাঁসা-পিতলের ব্যবহার। একসময় আমাদের দেশে পিতলের তৈজসপত্রের ব্যবহারের খুব প্রচলন ছিল। বিশেষ করে রান্নাঘরের তৈজসপত্র ও ব্যবহার্য সামগ্রীর ক্ষেত্রে পিতলের থালা, বাটি, গ্লাস, রান্নার হাঁড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা হতো। সাধারণত জমিদারবাড়ি ও অভিজাত পরিবারগুলোতে বেশি দেখা যেত পিতলের তৈজসপত্র। তামা কাঁসার জিনিসপত্র ব্যবহারকে অভিজাতের প্রতীক হিসেবে দেখা হতো।
ঢাকা জেলার ধামরাই এলাকা কাঁসা-পিতলের জন্য বিখ্যাত ছিল। তামা-কাঁসা-পিতল শিল্প শুধু বাংলাদেশে নয়, দেশের বাইরেও ছিল এর প্রচুর চাহিদা। এ ছাড়া বিদেশি পর্যটকেরা একসময় কাঁসা-পিতলের মধ্যে কারুকাজখচিত বিভিন্ন দেবদেবী ও জীবজন্তুর প্রতিকৃতি জিনিসপত্রগুলো নিয়ে যেত। ব্রিটিশ শাসন আমলে এ শিল্পের প্রসার ঘটে এবং বাংলার ঘরে ঘরে এর ব্যবহার জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সে সময় ঢাকার ধামরাই, শিমুলিয়া ছাড়াও টাঙ্গাইলের কাগমারী, জামালপুরের ইসলামপুর, বগুড়ার শিববাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে কারখানা গড়ে উঠতে শুরু করে।
কালের বিবর্তনে পিতল সামগ্রীর ব্যবহারের মাত্রা কমে গেলেও শৌখিন মানুষের কাছে এর চাহিদা রয়ে গেছে বৈকি! অন্দরসজ্জার উপকরণ হিসেবেও ইদানীং ঘরে শোভা পাচ্ছে পিতলের সামগ্রী। এসবের মধ্যে রয়েছে নানা রকম শোপিস, ওয়াল ম্যাট, ফুলের টব, বিভিন্ন ধরনের গ্লাস, থালা, বাটি, কাজলদানি, চামচ, হুক্কা, কলস, ঘণ্টা, গামলা, চামচ, বালতি, ডেগ, কড়াই প্রদীপ, বিভিন্ন দেবদেবীর মূর্তি, সঙ্গীত সাধনার যন্ত্র, খেলনা, আয়নার ফ্রেম ইত্যাদি ।
বাংলাদেশের তামার সংকর ধাতুসমূহকে পাঁচ ধরণের নামকরণ করা হয়েছে। তামা, কাঁসা, পিতল, ব্রোঞ্জ, ভরণ, তামার সঙ্গে দস্তা গলিয়ে পিতল, তামা ও টিনের সমন্বয়ে ব্রোঞ্জ ও কাঁসা, তামা-দস্তা ও সীসার মিশ্রণে ভরণ তৈরি হয়ে থাকে। এদেশে তৈরি তামা-কাঁসা-পিতল ও ব্রোঞ্জের দৈনন্দিন ব্যবহার্য দ্রব্যাদির প্রাচীন ঐতিহ্য ও শিল্প নৈপুণ্য সূদ্দর অতীত থেকে অদ্যবধি বিদ্যমান।
![](https://artisan.gov.bd/wp-content/uploads/2020/10/DSC_3557.jpg)
![](https://artisan.gov.bd/wp-content/uploads/2020/10/MG_1485-1024x687.jpg)
![](https://artisan.gov.bd/wp-content/uploads/2020/10/DSC_0008-scaled.jpg)